বার্সেলোনায় আর খেলতে চান না—ব্যুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে এ কথা মেসি জানিয়ে দেওয়ার পরপরই রোজারিওর মানুষ রাস্তায় নেমে উৎসব করল। ব্যাপার অনেকটা এমন যে মেসি বার্সেলোনা ছেড়ে চলে আসছেন নিউয়েলসে খেলতে। বৃহস্পতিবার রোজারিওর সন্ধ্যায় হয়তো অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। হাজার হাজার সমর্থক নিউয়েলসের পতাকা নিয়ে বাদ্যি বাজিয়ে উদ্যাপনে মেতেছেন। রাস্তা দিয়ে যারা যাচ্ছিলেন, তারা অবাক হতেই পারেন। হঠাৎ কী হলো! নিউয়েলস কি বিশেষ কিছু জিতে গেছে! এ উৎসবের কারণ কি!
জন্ম তাঁর আর্জেন্টিনার রোজারিওয়ে। ওই শহরের ফুটবল ক্লাব নিউয়েলস ওল্ডবয়েজে জীবনের কোনো এক সময়ে খেলার ইচ্ছার কথা আগেই জানিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। এত দিনে সে ব্যাপারটি কি সত্যি হতে যাচ্ছে! অন্তত রোজারিওর মানুষের ভাবনা তেমনই। ভাবনায় বাস্তবতার পরিমাণ সামান্য হলেও শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত ছেলেটিকে নিয়ে রোজারিওবাসীর আবেগ স্বাভাবিক ব্যাপারই।
রোজারিওবাসীর মনে বিশ্বাসটা যেন আরও পোক্ত হয়েছে। মেসি ক্যারিয়ার শেষ করার আগে একদিন না একদিন ঠিকই ঘরে ফিরবেন। নিউয়েলস ওল্ডবয়েজের জার্সি পরে মেসিকে খেলতে দেখা যাবে ঘরের মাঠে। সে দিন কি খুব বেশি দূরে!
উৎসবের কারণটা জেনে-শুনে মুখ বাঁকিয়েছেন অনেকেই। ‘গাছে কাঁঠাল আর গোঁফে তেল’ হয়তো এটাকেই বলে। মেসি বার্সেলোনা ছাড়ার কথা বলেও সারতে পারেননি, আর রোজারিওতে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। বেশির ভাগ সমর্থকই কিন্তু বিশ্বাস করেন না যে মেসি আসবেন। তবে আর্জেন্টাইন তারকার বার্সেলোনা ছাড়ার সিদ্ধান্তে ঘরে ছেলে ঘরে ফেরার একটা সম্ভাবনা তো তৈরি হয়েছে! এটাই বা কম কি!
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেস থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে এই রোজারিও শহরটার অবস্থান। জনসংখ্যা মাত্র ১৫ লাখ। নদীর তীরে সুন্দর এক শহর। আর্জেন্টিনার অন্যতম বৃহত্তম শহরই বলা যায় এটিকে। কৃষি প্রধান এই শহরটিতেই ১৯৮৭ সালে জন্মেছিলেন বর্তমান বিশ্বের সেরা ফুটবলারটি। কিন্তু মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার খবরে যদি রোজারিওবাসী ঘরের ছেলের ঘরে ফেরার উৎসব করে তাহলে কিছুটা কৌতূহল জাগাই স্বাভাবিক। পেলের জন্ম শহর সান্তোস কিংবদন্তিকে যেমন মাথায় তুলে রেখেছে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যেমন পর্তুগালের মাদেইরাতে ‘দেবতা’, রোজারিওতে কি মেসি ঠিক তেমন? উত্তর শুনতে চাইলে কিন্তু হতাশই হতে হবে সবাইকে। অন্তত মেসি-ভক্তদের।
নিজেদের মাটিতে জন্ম নেওয়া হালের কিংবদন্তির বার্সেলোনা ছাড়ার খবরে যতই উৎসব করুক রোজারিওবাসী, মেসির কীর্তিকে উদ্যাপন করার মতো তেমন কিছুই তারা করেনি, কখনোই। শহরজুড়ে নাকি মেসির একটা ভাস্কর্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি যে নিউয়েলস ক্লাব আশায় বুক বেঁধে বসে আছে, মেসি একদিন না একদিন তাদের হয়ে খেলবেন, সেই ক্লাবে গেলেও মেসির একটা ছবি খুঁজতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের শরণ নিতে হতে পারে।
রোজারিও অবশ্য মেসিকে নিয়ে একটা কাজ করে দেখিয়েছে। মেসি প্রসঙ্গে তারা একটা আইন করেছে। রোজারিওতে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর নাম ‘মেসি’ রাখা যাবে না। মেসি তাঁর বংশের নাম হলেও হালে নাকি অনেকেই নবজাতকের নাম ‘মেসি’ রাখছে। এ ব্যাপারটাকে ঠেকাতে চায় রোজারিও প্রশাসন। কিন্তু সেটি কতটা মেসিকে নিয়ে আবেগ, কতটা প্রশাসনিক কারণে, সেটি অবশ্য ঠিক পরিষ্কার নয়। ঠিক যেমন পরিষ্কার নয়, মেসির বার্সা ছাড়ার খবরে রোজারিওর নিউয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাবের সমর্থকদের উৎসব-উদ্যাপনের ব্যাপারটি। উৎসবটা যদি মেসির রোজারিওতে স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনার আশাবাদ নিয়ে হয়, তাহলে ঠিকই আছে। মানুষ তো আশাতেই বাঁচে। রোজারিওবাসীও মেসিকে নিয়ে আশাতেই থাকতে চায়। মেসি নিজে কিন্তু রোজারিও নিয়ে আবেগী। কোনো এক কালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমায় যদি জিজ্ঞেস করেন আমার জীবনের সেরা স্মৃতিগুলো কোথায় ছড়িয়ে আছে, আমি নির্দ্বিধায় বলব রোজারিওর কথা। আমার জন্মস্থান। আমার ছোটবেলা কেটেছে ওখানে।’ মেসি নিজের জন্মস্থান নিয়ে কতটা আবেগী, সেটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বোধ হয় একটাই-নিজের বিয়েটা পর্যন্ত তিনি করেছিলেন এ শহরে এসে।