নিউজ মিডিয়া ২৪: ডেস্ক: বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের বিরোধীদল- বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ ‘যত দ্রুত সম্ভব’ ভারত থেকে দেশে ফিরতে চান। সালাউদ্দিন আহমেদ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ তাকে ঢাকা থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর তিনি শিলং-এ কীভাবে এলেন তা তিনি জানেন না।
ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, তিনি ‘স্বেচ্ছায় ভারতে আসেননি’। এটা প্রমাণ করে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে যেতে চান।
ভারতে নির্বাসিত জীবনের তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে শুক্রবার। মেঘালয়ের রাজধানী শিলংএ ২০১৫ সালের ১১মে সকালে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তার ঠিক দু’মাস আগে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
তিনি আগাগোড়াই দাবি করে এসেছেন, অচেনা অপহরণকারীরাই তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং শিলং-এর রাস্তায় ‘উদভ্রান্ত অবস্থায়’ তাকে উদ্ধার করা হয়।
তারপর সালাউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করার অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করা হয়। তাতে জামিন পেয়ে তিনি এখনও শিলংয়েই আছেন।
সালাউদ্দিন আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি কখনওই স্বেচ্ছায় ভারতে আসেননি।
তিনি বলছেন, আদালতে সেটা প্রমাণ করতে পারলে তিনি যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে ফিরে যেতে চান।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, কীভাবে তিনি ভারতে এলেন সে সম্পর্কে তার কোনও ধারণাই নেই। ভারতের আদালতে কিন্তু অবৈধভাবে সেই দেশে ঢোকার অভিযোগেই তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
“আমি তো প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষা করছি, কখন আমার দেশে ফেরত যাওয়া হবে। মামলাটা এখন আর্গুমেন্ট স্টেজে আছে। মানে রায়ের ঠিক আগের পর্যায়ে। ফলে বলতে পারেন চূড়ান্ত পর্যায়ের পৌঁছে গেছে। কিন্তু এখন খালি তারিখের পর তারিখ পড়ছে, শুনানিটা আর হচ্ছে না!” -শিলং থেকে বিবিসিকে বলছিলেন সালাউদ্দিন আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, “জাজমেন্টটা হয়ে গেলে বুঝতে পারতাম কখন দেশে ফিরতে পারব। সাজা হবে, নাকি খালাস পেয়ে যাব। আর ছাড়া পেলেও তারপর তো সরকারি পর্যায়ে ডিপোর্ট করার দায়িত্ব থাকে। এ সব নিয়েও বেশ কিছুটা সময় নিশ্চয় যাবে। কিন্তু আমি চাইছি যত দ্রুত সম্ভব এখানকার মামলার নিষ্পত্তি হয়ে আমি যেন বাংলাদেশে ফিরতে পারি!”
এর আগে সালাউদ্দিন আহমেদের পরিবার চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরের মতো তৃতীয় কোনো দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও এখন সেই অবস্থান স্পষ্টতই পাল্টেছে। কিন্তু কীভাবে তিনি ভারতে এসে পড়েছিলেন, আজ তিন বছর বাদে সেই সম্পর্কে কি কিছু তিনি আদৌ মনে করতে পারছেন?
জবাব হল ’না’। তবে নিজের ইচ্ছায় যে আসেননি, অন্যরা কেউ জোর করে নিয়ে এসেছিল তাতে কোনো ভুল নেই।
তার ভাষায়, “এই বিষয়টা স্বেচ্ছায় ঘটেনি। যেমন ধরুন, সাগরে ঝড়ে পড়ে বা সাইক্লোনে দিক ভুল হয়ে কোনো জাহাজ যদি একটা দেশের সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে যায় তাহলে সেটা কার কার দোষ তা নিরূপণ করা কি খুব কঠিন? আমার ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকমই”, -হাসতে হাসতেই বলছিলেন সালাউদ্দিন আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, “আর এই জিনিসটা প্রমাণ করার চেষ্টাতেই আমরা আদালতে যতটুকু জোগাড় করতে পেরেছি, সেরকম সব নথিপত্রই জমা দিয়েছি। ধরুন জাতিসংঘের কার্যবিবরণী, আমেরিকার মানবাধিকার রিপোর্ট, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আর্লি ডে মোশন – কোনো কাগজপত্রই বাদ দিইনি।”
আদালতে বিচারাধীন বলে নিজের মামলার বিষয়ে এর বেশি কিছু বলতে চান না তিনি। কিন্তু ভারতের আদালতে তিনি সুবিচার পাবেন এতদিনে এই বিশ্বাসও কিন্তু তার জন্মেছে।
বিবিসিকে তিনি বলেন, “দেখুন, নির্বাসিত জীবনে কে আর থাকতে চায়? থাকতে হয় বলে থাকা, তা ছাড়া উপায়ই বা কী? তবে এখানে আমি সবাইকে বেশ আন্তরিকই পাচ্ছি। এখানকার আদালতের ওপরও আমার বিশ্বাস আছে। ভারতে আমি দেখেছি যে বিচারবিভাগ অনেক স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। বাইরের হস্তক্ষেপও তেমন চোখে পড়েনি। কাজেই আশা করছি আমি ন্যায় বিচার পাব।”
জামিন পাওয়ার পর থেকে শিলংয়ের একটি গেস্টহাউসই তার ঠিকানা, গত দুবছরে দুটো বড় অস্ত্রোপচার সামলে এখনও সেখানেই তিনি আছেন।
বাংলাদেশ থেকে পরিবারের লোকজন ও বন্ধুবান্ধব-অনুগামীরা মাঝে মাঝে দেখা করতে আসেন। এমন কী সেখানে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও পুরোপুরি থেমে নেই।
তার ভাষায়, “সব সময়ই দেশের সাথে, দলের সাথে, নেতৃবৃন্দের সাথে কথাবার্তা হয়, যোগাযোগ হয়। আমার কেন্দ্র থেকেও লোকজন এখানে আসা যাওয়া করেন। স্ত্রী-সন্তানরাও যখন পারেন, আসেন।”
“অনলাইনের সুবাদে বাংলাদেশের সব ঘটনাবলীর দিকেও নিয়মিত নজর রাখার সুযোগ হয়। আর তার ভিত্তিতে আমি পরিষ্কার বলতে চাই গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মুক্তির জন্য সারা বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রের অবশ্যই জয় হবে,” বলছিলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বছরতিনেক আগে জানিয়েছিলেন, সালাউদ্দিন আহমেদকে ভারত যদি প্রত্যর্পণ করে তাহলে বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বিচার শুরু হবে।
কিন্তু ভারতে বিচারাধীন মামলাটির নিষ্পত্তি হওয়ার আগে তাকে যে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না, সেটি এতদিনে পরিষ্কার। সূত্র: বিবিসি।