নিউজ মিডিয়া ২৪: ঢাকা : বিএনপির দুই ভাইস চেয়ারম্যানকে দেওয়া শোকজ নোটিশ ঘিরে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন। অপর ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জবাব দিয়ে পদত্যাগ করতে পারেন এমন গুঞ্জন আছে।
গত ১৪ ডিসেম্বর ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় বিএনপি। দলের নাম ব্যবহার করে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করে সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগে কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- সেজন্য শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এবং হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে ৫ দিনের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত জবাব জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর বুধবার শওকত মাহমুদ লিখিত জমা দিয়েছেন। জবাবে সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কর্মকান্ডে তিনি জড়িত নন বলে জানিয়েছেন।
শওকত মাহমুদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, এক পৃষ্ঠার ওই চিঠির তিন লাইনে দুটি বাক্যে তিনি তার জবাব দিয়েছেন। তিনি
বিএনপির মেজর হাফিজ ও শওকত মাহমুদের শোকজ ঘিরে নানা গুঞ্জন
বলেছেন, জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শের বাইরে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কাজে তিনি জ্ঞাতসারে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এরপরও তার অজান্তে তিনি কোনো কাজে জড়িত থাকলে তার জন্য তিনি দুঃখিত।
অন্যদিকে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এখনো শোকজের জবাব দেননি। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, তিনি তার বক্তব্য আগামীকাল শনিবার সকাল ১১টায় বনানীর তার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানাবেন।
মেজর হাফিজের ঘনিষ্ঠনরা জানান, এদিন তিনি তার শোকজের লিখিত জবাব সংবাদ মাধ্যমকে জানানোর পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেবেন এবং পুরো রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার ঘোষণা দিতে পারেন। তবে বিএনপির একটি অংশ তাকে সংবাদ সম্মেলন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।
হাফিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে সূত্রগুলো বলছে, ১/১১ সময়ে দলকে বিভক্ত করে মহাসচিব হওয়া, বিভিন্ন সময়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সেটা করতে অপারগতা প্রকাশ করা বিশেষ করে কৃষক দলের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি তা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দলের সিনিয়র নেতাদের অসন্মান করে বক্তব্য প্রদান করেছেন।
বিএনপি সূত্রমতে, শোকজ নোটিশ দেওয়ার চেয়ে এই তথ্য সংবাদ মাধ্যমকে জানানোয় দুই নেতা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। দল কোনো কারণে যেকোনো নেতাকর্মীর কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ চাইতে পারে। তা সাংগঠনিক বিষয়। কিন্তু এই তথ্য সংবাদ মাধ্যমে অতি উৎসাহী হয়ে যারা জানিয়েছেন তা ঠিক করেননি। এজন্য তারা চটেছেন। এই নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দুই নেতার পক্ষ থেকে কথাও হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, দুই নেতার শোকজ নোটিশকে ঘিরে দলের নানামুখী আলোচনা আছে। কেউ বলছেন, খালেদা জিয়া তারেক রহমানকে মাইনাস করার মিশনে থাকা বেশ কয়েকজন নেতার বিষয়ে বিএনপিতে তথ্য আছে। তাদের প্রতি নজর রাখা হচ্ছে। যাদেরকে শোকজ দেওয়া হয়েছে তারা উপযুক্ত জবাব না দিতে পারলে বহিষ্কারও হতে পারেন। এছাড়া নজরদারিতে থাকা আরও কয়েকজন নেতাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরে নানা আলোচনা থাকলেও বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রকাশ্যে কোনো নেতাই কথা বলতে রাজি নন।
এ ব্যাপারে দুইদিন আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, একটা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী কখনোই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারে না। আমাদের মধ্যে নানা মত থাকতে পারে, মত পার্থক্য থাকতে পারে। সেটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেই মত পার্থক্য প্রকাশ্যে আসতে পারে না। সবার সামনে বলতে পারি না। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সম্পর্কে আমরা যদি প্রকাশ্যে বলি তাহলে সাধারণ নেতাকর্মী কি করবে? জনগণ কি ভাববে? এটা তো কখনই হতে পারে না। ভিন্নমত থাকলেও দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে কেউ নন।
এদিকে এই ইসু্যতে বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। সূত্র জানায়, এরপর তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, দলের দায়িত্বশীল নেতাদের পরামর্শে হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ইতিবাচক। অর্থাৎ তাদের বিষয়ে তিনি কঠোর হবেন না।
সুত্র :শীর্ষ খবর ডট